পিরিয়ড নিয়ে সোশ্যাল ট্যাবু ও আমার ভাবনা।
August 1, 2022
My Life
11 Comments
অনেকের মধ্যে বদ্ধমূল ভুল ধারণা রয়েছে যে, গরম দেশে মেয়েরা দ্রুত বয়ঃসন্ধিতে অবতীর্ণ হয়! অনেক মোল্লাকেও দেখবেন ওয়াজ মাহফিলে বলতে, গরম দেশে যেমন আম কাঠাল তাড়াতাড়ি পাঁকে, মেয়েরাও গরম দেশে অল্প বয়সে পেঁকে যায়। বৈজ্ঞানিক মতে তাদের শরীরকে গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত করে তোলার প্রক্রিয়ার সাথে কিছু হরমোন নিঃসরণ হতে থাকে, যা মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটায়।
আমি যখন কিশোরী ছিলাম, তখন কেউ আমার সঙ্গে বয়ঃসন্ধি কী, মাসিক কী—এই কথাগুলো বলেনি। ফলে বড় হয়েছি একদম না জেনে। কারন, আমার মা এসব নিয়ে কথা বলতে চাইতেন না, সন্তানের সাথে এসব আলাপ করতে লজ্জাবোধ করতেন। আমার প্রথম যখন মাসিক শুরু হলো, তখন প্যাডের পরিবর্তে পুরোনো কাপড় ব্যবহার করতে দেওয়া হতো, যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। বাজারের হিসাবে প্যাড কেনাটা ছিল বাড়তি ব্যয়। তাই পুরোনো কাপড় বারবার ধুয়ে ব্যবহার করতে হোত। আর আমিই ছিলাম তাঁদের বড় সন্তান। আমার প্রথম পিরিয়ড হয়েছিল অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়। পুরনো কাপড় পরতে পরতে যখন প্রথমবার প্যাড পরি নিজের ইনকাম দিয়ে, সঠিক ব্যবহারবিধি না জানায় ভীষণ অস্বস্তিতে পরতাম। তীব্র মাজা ব্যথা, মাঝেমধ্যে জ্বরের কারনে বয়ঃসন্ধিকালের ওই সময়টায় আমার এই মুড সুইং টাকে আমার সোসাইটিতে দেখা হোত, আমি অশুচি। আমাকে ব্লাড টা কন্ট্রোল করে রাখতে হবে, বাইরে কোথাও গেলে জামায় লাল দাগ দেখা গেলে হাসাহাসি হোত, সেটা খুবি লজ্জার বিষয় ছিলো !
আমি এমন একটা দেশে বড় হয়েছি, যেখানে মাসিক নিয়ে স্কুল, পরিবার বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে স্পষ্টভাবে তেমন কোনো তথ্য দেওয়া হয় না। মাসিক চলাকালে যে তলপেটে ব্যথা হতে পারে, মাথাব্যথা হতে পারে, গা ম্যাজম্যাজ ও হাত-পা শিরশির করতে পারে, সেই ধারণাও কেউ দেয় না। তারা কোনোভাবেই কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে যৌনজীবন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনাকে গ্রহণ করে না; বরং এ বিষয়ক আলোচনাকে ঘরে-বাইরে, এলাকায়, স্কুলে এখনও ভয়াবহভাবে ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়। মাসিক, মাসিককালীন পরিচ্ছন্নতা, প্রজনন স্বাস্থ্যতত্ত্ব, যৌনতা, পরিবার পরিকল্পনা এবং যৌনবাহিত রোগ নিয়ে আলোচনা করাটা দেশের প্রায় সব ধরনের পরিবারেই গর্হিত কাজ বলে সামাজিক ট্যাবু চালু রয়েছে।
আল্লাহ্র বাণীঃ “লোকেরা তোমাকে হায়য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, তার অপবিত্রতা। সুতরাং হায়য অবস্থায় স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক। আর তারা পাক-পবিত্র হওয়ার পূর্বে তাদের সাথে মিলিত হয়ো না।” মাসিক চলাকালে আমার নিজেকে অপবিত্র ভাবতে হোত। কারণ সব ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহণ করা আমার বারণ ছিল। বলা হোত, পিরিয়ড হয়েছে তাই সেই সময় আমি কোন ধর্মীয় কোন আদেশ যেমন – নামাজ , রোজা করতে পারবোনা। এমনকি জায়নামাজও হাত দিয়ে ধরতে দেওয়া হতো না। নারীদের জন্য পিরিয়ড একটি অনিবার্য সত্য। অথচ বিষয়টিকে রীতিমতো নিষিদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে সমাজে। মাসিক রজঃস্রাব হোল ডিম্বাণুর কান্না, এই ডিম্বানু দিয়েই জরায়ুতে আসে ভ্রুন, হয় মানব শিশু। আমার কাছে হাস্যকর লাগে, এই মাসিক হলেই নারী হয়ে যাবে অপবিত্র ? তাকে তার রক্ত , মুড সুইং, সব শারীরিক ও মানসিক সমস্যা গোপন করে রাখতে হবে ? ওপেনলি একটা মেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারবেনা ? এটা কেনার জন্য কোন পুরুষকে ফার্মেসীতে পাঠাতে হবে?
এটা নিয়েই এক্সাম দিতে হবে, অফিসের মীটিং, হাজার প্যারা সামলানোর পরেও শুনতে হয় মেয়েরা উইক ছেলেদের থেকে, তারা কিছুই পারেনা ! আর, পিরিয়ডের কারনে রোজা রাখতে না পারলে সোসাইটিকে দেখানো যাবেনা ? লাঞ্চের সময় ক্ষুধা লাগলে অফিস ক্যান্টিনে সে কেন ওপেনলি খাবার খেতে পারবেনা ? নারীর জীবনের প্রাকৃতিক এই পরিবর্তনকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা আমাকে খুব কষ্ট দিত। লুকিয়ে সংকোচে দিন কাটানোর যে ধারা চলে এসেছে যুগ যুগ ধরে , এই প্রজন্মও কি মাসিক নিয়ে এমন বিরূপ একটা চিন্তা নিয়ে বেড়ে উঠবে?
11 Comments
Riyad 14 Aug 2022
Ei mohila pagol.
Ishita 30 Aug 2022
Shame on you !
Mizan Tamim 10 Sep 2022
apnar shami ba bhai sanitary napkin kinle apnar somossa ki ? 🤪
Karim 04 Oct 2022
Apnader moto naribadi der jonnyoi live together, open sex eto bere gece.
Sobuj 22 Oct 2022
You are destroying the youth culture and misinterpreting the social norm.
Mazhar 10 Nov 2022
Very logical confession, proud of you sister!
উম্মে আইরিন 19 Nov 2022
চমৎকার একটা ব্লগ। কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পড়ে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
কবির ঐশী 26 Jan 2023
আপনার কথাগুলো প্রত্যেকটা আধুনিক মেয়ের ই মনের কথা, অসাধারন পোস্ট !
জামান 30 Jan 2023
শেয়ার দিলাম ।
রাবেয়া 10 Mar 2023
রোজার সময় সবাইকে দেখিয়ে খেতে হবে কেন? আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দিক, আমীন।
নিল আকাশ 12 Mar 2023
Khubi lojjar post, amader ma-chachi ra ja lukiye rekhechen aj egulo samne tene ene somajer khoti korcen.🤧